পিয়াস সরকার:নামী স্কুলে পড়ছে আপনার সন্তান। সন্তানের জন্য কতোই না চিন্তা। মাস শেষে গুণছেন স্কুলের বেতন। হোম টিউটরের বেতন, কোচিং আরও কতো কি? আপনার সন্তান কি তাতে খুশি? নাকি টাকা দিয়েই সন্তান মানুষ করার অসুস্থ প্রতিযোগীতায় নাম লিখিয়েছেন?
দোয়া করি মানুষের মতো মানুষ হও- এই বলেই অগ্রজরা অনুজদের দোয়া দেন। কেউ কিন্তু বলেন না- বাবা দোয়া করি জিপিএ-৫ পাও। অভিভাবকরা অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নামিয়েছেন আদরের সন্তানদের। কিন্তু সন্তানের মানসিক বিকাশের দিকে খেয়াল রাখার সময়টা কই? কতো বয়স হলো আপনার সন্তানের? এই বয়সে স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারে তো সে? যদি না পারে তবে ভেবে দেখুন। জিপিএ-৫ ধারী মানসিক অসুস্থ সন্তান নাকি সুস্থ সন্তান চান।
২০২১ সালের এইচএসি ও সমমানের ফলে রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে জিপিএ-৫ধারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা।
এক লাখ ৮৯ হাজার শিক্ষার্থী পেয়েছেন সর্বোচ্চ ফল। এই রেকর্ড সংখ্যক অভিভাবক যারা জিপিএ-৫ এর খুশিতে মিষ্টির প্যাকেটের পর প্যাকেট কিনেছেন বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন সন্তানের জন্য সুস্থ মানবিক পরিবেশ গড়ে তুলেছি।
প্রথম শ্রেণির ছোট্ট শিশুটার ব্যাগে পুরছেন ৮ থেকে ১০ টা বই। এই বয়সে তো বই নিয়ে বসবারই কথা নয়। কিন্তু খেলার ফাঁকে সময় পেলে বসবার কথা বই নিয়ে। কিন্তু আপনি যোগ করে দিচ্ছেন দুর্বোধ্য সব বই। এটাকে শিশুশ্রম বললে কি খুব ভুল হবে? আপনি একসঙ্গে ৫ কেজি চালের ভাত খেতে পারবেন? যদি না পারেন তবে আপনার ছোট্ট বাচ্চাকে কেন চাপাচ্ছেন বাড়তি বোঝা? তারও একটা ধারণ ক্ষমতা আছে। নাকি টাকা খরচ করলেই সন্তানের মুখে হাসি ফোটানো যায়!
নামী স্কুলে গুণতে হয় কাড়ি কাড়ি টাকা। এসব স্কুল চাপিয়ে দিচ্ছে আপনাকে বইয়ের বোঝা। কিন্তু কেন? কারণ এটা তাদের ব্যবসা। আর এই ব্যবসায় জ¦ালানী দিচ্ছেন আপনি। বলিউডের জনপ্রিয় সিনেমা ‘ত্রি ইডিয়ট’ নিশ্চয়ই দেখেছেন। এই সিনেমার সুরে বলতে হয়- এটা মাথা, প্রেশার কুকার নয়।
সরকার অনুমোদন না দিলেও শিক্ষার্থীদের পড়ানো হচ্ছে একাধিক বই। কারণ অভিভাবকরা চান তার বাচ্চা অধিক বই পড়ুক। সে উপকারে আসুক কিংবা না আসুক। আরও বলতে হয়, অভিভাবকদের প্রধান ভয়- পিছিয়ে যদি যায় আমার সন্তান। কিন্তু একবারও ভাবেন না অধিক বই মানেই লেখাপড়া নয়। সন্তানের মানসিক বিকাশ- এ আবার কি?
সম্প্রতি এক গবেষণা বলছে, শহরের ৬১ শতাংশ শিক্ষার্থী মাঝারি থেকে চরম মাত্রায় মানসিক যন্ত্রণায় ভোগেন। আর মাত্র ২.৭ শতাংশ শিক্ষার্থী সক্রিয় জীবন যাপন করেন। আর গত বছর ১০১ জন শিক্ষার্থী বেছে নিয়েছেন আত্মহত্যার পথ। শহুরে ২৮ শতাংশ শিক্ষার্থী ভোগেন স্থুলতায়।
প্রতিবছরই পরীক্ষার ফলের পর সংবাদ আসে আত্মহত্যার। আচ্ছা জিপিএ-৫ কি জীবনের থেকে বড়? আর এতো জিপিএ-৫ দিয়েই বা হবে কি? শিক্ষার মান উন্নয়ন হচ্ছে- আমি বলব না। একটা উদাহরণ- ঢাবির ভর্তি পরীক্ষায় এবছর পাস করেছে মাত্র ১০ শতাংশ শিক্ষার্থী।
২০২৩ সাল থেকে শিক্ষাকে ঢেলে সাজাতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কিন্তু এরজন্য প্রধান ভূমিকা পালন করতে হবে অভিভাবকদের। আপনারা চাইলে বন্ধ হবে অধিক বইয়ের চাপ। বন্ধ হবে ব্যবসা। শিক্ষার্থী বান্ধব নতুন কারিকুলাম তখনই কাজে আসবে যখন সন্তানের ভালোটা বুঝবেন আপনি। আর না হলে বলতে হবে- কাজীর গরু কেতাবে আছে গোয়ালে নাই, সন্তান আছে মানসিক বিকাশ নাই। সূএ:মানবজমিন